Attention: We are not providing any mental health counseling/services here!

Body shaming is the silent killer of our society (বডি শেমিং- আমাদের সমাজের নীরব ঘাতক) - TeenTalk EP 03

“আরে দেখ দেখ, মেয়েটা একদম গোল আলুর মতো দেখতে!”


“ভাই, ভুঁড়িটা তো বেশ ভালোই গোলগাল দেখাচ্ছে। কোন দোকানের চাল খান আপনি?”

হাসি-ঠাট্টার ছলে প্রতিদিন কতবার এই কথাগুলো আমরা বলি আর শুনি, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। 

যেন অতিরিক্ত বা কম ওজন নিয়ে মজা করলেই পৃথিবী থেকে ওজনজনিত সমস্যা গায়েব হয়ে যাবে। 

তা তো যাবেই না, বরং এমন সব কথা প্রতিনিয়ত শুনতে শুনতে ঐ ব্যক্তি নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকেন। 


তার মাঝে জন্ম নেয় একধরনের বিষণ্ণতা, যা ধীরে ধীরে মানসিক অসুস্থতায়ও পর্যবসিত হতে পারে। যে যেমন, তাকে তেমনভাবে মেনে নিতে না পারার ব্যর্থতা হয়তো আমাদেরই, কিংবা এরকম সমাজে বেড়ে ওঠা তারই (ব্যক্তিত্বের) প্রতিফলন। প্রতিনিয়ত সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।


একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো, চলার পথে কতবার আপনাকেও এই বিষয়টির সম্মুখীন হতে হয়েছে? নিজের বাহ্যিক উপস্থাপনের ভঙ্গি পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে? 


শুধু চিকন বা মোটা হওয়া নিয়ে সমস্যা থাকলে তা-ও চলতো। কারো হয়তো সৌন্দর্যের তথাকথিত সংজ্ঞার চেয়ে চোখ দুটো একটু ছোট, নাকটা একটু বোঁচা, মুখে ব্রণ বা কোনো কাটা দাগ আছে। 


ব্যস, তাহলেই আর রক্ষা নেই। কারো দৈহিক আকার, আয়তন বা গড়ন নিয়ে করা এমন সব প্রকাশ্য সমালোচনা বা তীর্যক মন্তব্যের নামই ‘বডি শেমিং’।


একনাগাড়ে মানুষের মুখ থেকে এমন কটুকথা শুনতে শুনতে নিজের উপরই বিতৃষ্ণা জন্মে মানুষের। কেউ কেউ এই যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে বেছে নেয় বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য। আসলে আমাদের মস্তিষ্কে সৌন্দর্যের এমন কিছু বাঁধাধরা-ছক কষা সংজ্ঞা ঢুকে গেছে, যা থেকে বেরিয়ে আসা বেশ কষ্টসাধ্য। 


ভারতীয় উপমহাদেশে 'বডি শেমিং' এমন মহামারী আকার ধারণ করায় এ অঞ্চলে দুর্দান্ত সাফল্যের সাথে টিকে আছে রঙ ফর্সা করার ক্রিম আর স্লিমিং টি তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো।


আসলে এই কুপ্রথার জনপ্রিয়তা থাকার পেছনে দায় কেবল সাধারণ জনগণের নয়। সবাই যে খুব বুঝে-শুনে বডি শেমিং করছে, ব্যাপারটা তা-ও নয়। 


প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই বা টেলিভিশন অন করলেই ওজন কমানোর বা নিখুঁত ফর্সা হওয়ার এত এত পদ্ধতি চোখে পড়ে যে আমরা ধরেই নেই চিকন আর ফর্সা না হলে সে সুন্দর নয়। 


কেন বডিং শেমিং হয়-

কী বলে বডি শেমিং করছেন তার চেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো আপনি একজন মানুষের মানসিকতাকে গুরুত্ব না দিয়ে তার শরীর নিয়ে পড়ে আছেন। 

শরীর খুব ক্ষণস্থায়ী একটি অস্তিত্ব। মরে গেলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে পচে-গলে মাটির সাথে মিশে যায় শরীর আর অনন্তকাল থেকে যায় কর্ম। একটি সুন্দর মন পাল্টে দিতে পারে একটি সমাজ, একটি সুন্দর শরীরের কথা মানুষ বেশিদিন মনেও রাখে না। তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে, তারপরও মানুষ কেন এত বেশি বডি শেমিং করে?

এর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা খুব সহজ। আপনি যখন যোগ্যতায় কারো কাছে হেরে যাবেন, কারো উপর ভীষণ রাগ হবে বা বিরক্ত লাগবে, তাকে ছোট করার একটি মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে তার শরীরকে বেছে নেয়া হবে একদম নির্ঝঞ্ঝাট এক উপায়। 

এতে মনের ক্ষোভও মিটলো, প্রতিপক্ষকে ছোটও করা হলো। ধরা যাক, চাকরির পরীক্ষায় এক মেয়ের কাছে পরাজিত হয়ে আপনি চাকরি পেলেন না, পেয়ে গেল মেয়েটি। মানতেই হবে সে ঐ কাজটির জন্য যোগ্য ছিল। 

কিন্তু কগনিটিভ ডিজোনেন্স বা নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য আপনি হয়তো মনে মনে ভাববেন, ‘চাকরি পেলে পাক, ওর যে চেহারা, কে বিয়ে করবে ওকে?’ এভাবেই জন্ম নেয় একেকটি বডি শেমিংয়ের গল্প।

সৌন্দর্যের কোনো স্ট্যান্ডার্ড থাকতে পারে না, কিংবা সৌন্দর্যের কোনো সংজ্ঞা থাকতে পারে না। পার্লারের দেয়ালে দেয়ালে যে ছবি টাঙানো থাকে, কেউ সেরকম সুন্দর না হলে তার ‘খুঁত’ ধরতে হবে এমন চিন্তাও ছোট মনের পরিচায়ক। 

সমাজ যেমন চাইবে সেই শর্ত মেনে সুন্দর হতে হবে- তার কোনো মানে নেই। খুব সহজেই বলে ফেলা যায়, তুমি তো সুন্দর না। কিন্তু খুব সহজে কি একজন সুন্দর মনের মানুষ হওয়া যায়? 

একজন তথাকথিত কালো, মোটা বা ‘অসুন্দর’ মানুষ সমাজের কোনো ক্ষতি করে না, না তো তার কারণে কেউ হয়রানির শিকার হয়। কিন্তু কারো মনে যদি বাস করে অসুন্দর চিন্তা, সেক্ষেত্রে ঘটে যেতে পারে ঘোরতর অনিষ্ট। 

তাই কারো ভালো করার উদ্দেশ্যে বডি শেমিং না করে যারা সমাজের জন্য আক্ষরিক অর্থেই ক্ষতিকর তাদেরকে কাউন্সেলিং করে সুপথে আনাই শ্রেয়।


মোঃ ওয়ায়েছ আহমেদ, 

বিএসসি (অনার্স),

এমএসসি (অধ্যয়নরত), 

মনোবিজ্ঞান বিভাগ, 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 


References: 

1. Body shaming: a hidden issue in our society- HS Insider

2. Body Shaming – The Most Prevailing Dilemma Of Our Society- PARHLO

3. Body Shaming: What Is It & Why Do We Do It?- WALDEN


ডেমো আর্টিকেল - ক্রেডিট: মেন্টাল হেলথ কেয়ার 

Rate this article

Aruddho Ekattor is a non-profit youth organization that works to build an innovative and creative young society by increasing the knowledge and skills of the younger generation.

Post a Comment