সময়ের বিবর্তন যেমন স্রোতের বেগে চলতে থাকে,ঠিক সেই ধারার সাথে তাল মিলিয়েই আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে ধরা দিতে থাকে।তখনই উপলব্ধি করতে শুরু হয়, এই তো!আর একটুউউউ খানি পা বাড়াবো,তারপরই তো আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো..
কিন্তু সেই আকাশছোঁয়া স্বপ্নের মাঝেই যদি হুট করে ঘন কালো মেঘ পথে বিঘ্ন হয়ে দাঁড়ায় তখন??
বলছি এমন একজন প্রফুল্ল -চঞ্চল মানুষের কথা, যার জীবন, খ্যাতি,সুনাম সব না চাইতেই হাতের নাগালে একসময় উপস্থিত ছিলো।আশেপাশের সকল মানুষের কাছেই ছিলো "সর্বগুণে গুণন্বিতা" আর এই প্রফুল্ল জীবন নিয়েই হাই স্কুলের গন্ডি পেরোতে না পেরোতেই তার স্বপ্নের কলেজে ঠাঁই হয়।বাহ! জীবন কি সুন্দর, তাই না? যেনো ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে হোয়াইট হাউজের দেখা স্বপ্নগুলো সত্যিই পূরণ হতে যাচ্ছে~~কিন্তু কথায় আছে না? যত গর্জে তত বর্ষে না?''লাইফের সবচেয়ে কঠিন সময় ঠিক তখন থেকেই শুরু! টানা ১৫ দিন স্বপ্নের কলেজে ক্লাস করার পরই হুট করে অসুস্থ হয়ে যাওয়া!কে জানতো সেটি 'ব্রেইন টিউমার' নামক কঠিন ব্যাধিতে পরিণত হবে?কখনো কি এই ধাক্কার জন্য প্রস্তুত ছিলাম?পুরো এক বছর সম্পর্ক হয়ে গেলো হসপিটালের বিছানা,হাতে বইয়ের বদলে স্যালাইন আর ক্যানোলা,বুলিতে ছিলো হাসির বদলে কান্নার আওয়াজ!তবে আর কদিন এভাবে চলতে দিব?'অরুদ্ধ ' যখন হয়েছি রুখে তো দাঁড়াতেই হবে আমায়!আবারো চাইলাম হাতে সেই ক্যানোলার বেড়িবাঁধ নিয়েই সামনে এগিয়ে যাব,কলেজ জীবন কাঁটাবো!আবারো নিজের দেই প্রানের বিতর্কের স্টেইজে ফিরে যাব,আবারো মঞ্চ কাঁপাবো!তবে সেই অরুদ্ধ হওয়ার ভাগ্য আর কপালে স্বয়ে উঠে নি!ফাইনাল এক্সামের ঠিক দুদিন আগেই ঠিকানা হয় সরাসরি আইসিউ,বিষয়টা তখন পড়ালেখা বিষয়ক পরীক্ষা না হয়ে,জীবন মরনের লড়াইয়ের ফাইনাল এক্সামে পরিনত হয়!
মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে টানা তিন দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়াইয়ে বিজয়ী হতে পারি অবশেষে আলহামদুলিল্লাহ!এভাবেই জীবন থেকে টানা একবছর চোখের পলকেই ভ্যানিশ হয়ে যায়।হায় আমার জীবন তো এখানেই শেষ,আমার বন্ধুরা তো আমার থেকে এগিয়ে গেলো, তারা সফল হলো আর আমি হয়ে গেলাম বিফল,এই জীবনের মানে কি তাহলে?বেঁচে থাকবোই বা কেন?যে পৃথিবী আমার জন্যই না,সেই পৃথিবীতে আমার নিঃশ্বাস নিয়েই বা লাভ কি?বেস্ট ডিসিশন এটাই,জীবনটাকেই শেষ করে দেই,,,,Wait a minute! আমি না অরুদ্ধ? অরুদ্ধ হয়ে এত্ত সহজে হার মেনে ফেলবো?এ আমি কি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম,যে পরিবার আমাকে সেই ছোটবেলা থেকে তিলে তিলে আদর ভালোবাসা দিয়ে এতদূর পর্যন্ত নিয়ে এলো তাদের এই ভালোবাসার মর্যাদা আমি এত্ত সহজেই ধ্বংস করে দিব?পরকালে আমি জবাব দিবই বা কেমন করে সৃষ্টিকর্তার কাছে?!
না!!আর না!অসুস্থতাকে যমের দূত না বানিয়ে নিজেকে আবার ফিরে আসতে হবেই মধ্যমনি হয়ে সকলের মাঝে✊
দীর্ঘ একবছর ব্রেকের পর,আবারো শুরু করলাম নতুন জীবন,,আবারো নতুন পরিবেশ,নতুন পরিচিতি,নতুন মুখ,যদিও প্রথমে একটু ঘাবড়ে ছিলাম তবে সেই ভয় আর সংকোচ বোধ বেশি দিন ছিলো না,তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো সেই নতুন পরিচিতি মানুষগুলোর।ফিরে পেলাম আবারো সেই আগের জায়গা,পেলাম' অরুদ্ধ ' নামক এক পরিবার।যার ফলেই আজ এই মনকথনে আমার এই শব্দগুলো প্রেজেন্ট করার সুযোগ পেলাম।এই তো দুদিন আগের কথা,আবারো সেই অসুস্থতার সম্মুখীন হতে হলো,হুহ!তাতে কি?এই অসুস্থতা যতটানা আমায় ভোগাবে,তার দ্বিগুন পরিমান সাহস আর অনুপ্রেরণা নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে থাকবো সম্মুখে, ভুলে গেলে চলবেনা যে,"এই ধরণীতে জয়ী হতে এসেছি,পরাজিত হতে না"
আমি অরুদ্ধ,আমরা অরুদ্ধ ✊
Anonymous
Age 18, Female
Event happened - 2021-2022
Comment: মনকথনে স্মৃতিগুলো শেয়ার করে মন হালকা লাগছে (The mind feels light by sharing the memories in Mon Kothon)